Marxists Internet Archive
Bangla Section


ডেমোক্রেটিয় ও এপিকিউরিয় প্রকৃতির দর্শনের পার্থক্য

কার্ল মার্কস


সূচীপত্র

প্রথম অংশ: ডেমোক্রিটিয় ও এপিকিউরিয় প্রকৃতির দর্শনের সাধারণ পার্থক্য

৩. ডেমোক্রিটিয় এবং এপিকিউরিয় প্রকৃতির দর্শনের অভিন্নতায় বাধাসমূহ :
ঐতিহাসিক বিবৃতি ছাড়াও ডেমোক্রিটিয় এবং এপিকিউরিয় প্রাকৃতিক দর্শনের অভিন্নতার আরো স্বতন্ত্র প্রমাণ আছে। পরমাণু এবং শূন্য- এ নীতি দুঞ্চটো অবিসংবাদিত ভাবে এক। শুধুমাত্র অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন ক্ষেত্রে তাদেরকে স্বেচ্ছাচারী, অপ্রয়োজনীয় এবং আলাদা বলে মনে হয়।
যা হোক, একটা কৌতুহলোদ্দীপক এবং অসমাধানযোগ্য সমস্যা থেকেই যায়। একদম একই পদ্ধতিতে বিঞ্চান শেখানোর পরও দুই দার্শনিকের মধ্যে কি অসামঞ্জস্য! এই বিঞ্চানের সত্যতা, নিশ্চয়তা, প্রায়োগিকতা এবং সাধারণভাবে চিন্তা ও বাস্তবতার সম্পর্কে যা কিছু বলা হয়েছে তা নিয়ে এদের অবস্থান ভিন্ন মেরুতে। আমি বলি তারা পরস্পর বিপরীত মেরুতেই আছেন। এখন তা প্রমাণ করার চেষ্টা করব।
ক) মানুষের ঞ্চানের সত্যতা এবং দৃঢ়তা সম্পর্কে ডেমোক্রিটাসের মতামতের বিবৃত অনুচ্ছেদ পাওয়া যাবে। শুধু অনুচ্ছেদ নয়, বরং ডেমোক্রিটাসের দৃষ্টিভঙ্গিই পরস্পরবিরোধী। এরিস্টটলের মনস্তত্ত্ববিদ্যা সম্পর্কে ট্রেন্ডেলেনবার্গের জোরালো ভাষ্যের জন্য এরিস্টটল ছাড়া পরবর্তী অন্যান্য লেখকরা এই ধরণের পরস্পর বিরোধিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন, এই ধারণা আসলে সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে এরিস্টটলের মনস্তত্ত্ববিদ্যায় বর্ণিত আছে : জ্ঞজ্ঞযেহেতু প্রপঞ্চটি সত্য, তাই ডেমোক্রিটাস আত্মা এবং মনকে অভিন্ন এবং এক বলে ধরে নেন।ঞ্চঞ্চ কিন্তু তিনি তাঁর জ্ঞঅধিবিদ্যাঞ্চয় লিখেছেন, জ্ঞজ্ঞডেমোক্রিটাস বলেন যে, সত্য বলে আদতে কিছু নেই। আর যদি কিছু থেকেই থাকে তাহলে তা আমাদের কাছে গোপন রাখা হয়েছে।ঞ্চঞ্চ এরিস্টটলের এই অনুচ্ছেদগুলো কি পরস্পরবিরোধী নয়? প্রপঞ্চটি যদি সত্য জিনিস হয় তবে সত্য জিনিসটিকে কি করে গুপ্ত রাখা যাবে? গুপ্তকরণের প্রক্রিয়া তখনই শুরু হয় যখন প্রপঞ্চ ও সত্য আলাদা হয়। কিন্তু ডায়োজেনিস লেরটিয়াস বলেন যে, ডেমোক্রিটাসকে সন্দেহবাদীদের মধ্যে গণ্য করা হয়। তাঁর মন্তব্য উদ্ধৃত হয়: জ্ঞজ্ঞবাস্তবে আমরা কিছুই জানি না; সত্য পড়ে আছে কূপের গভীর তলায়।ঞ্চঞ্চ একই বক্তব্য খুঁজে পাওয়া গেছে সেকটাস এমপেরিকাসে।
পরমাণু এবং পৃথিবীর সম্পর্ক নির্ধারণের মধ্য দিয়ে ডেমোক্রিটাসের এই সন্দেহপ্রবণ, অনিশ্চিত এবং অন্তর্গত স্ব-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি এক্ষেত্রে শুধুমাত্র কিছুটা বিকশিত হয়েছে। আর যা হয়েছে তা হল পরমাণু জগতের সম্পর্কের পথে যা ইন্দ্রিয়ে প্রতীয়মানতায় নির্ধারিত।
একদিক থেকে, ইন্দ্রিয়ের সংবেদিত প্রতিভাস স্বয়ং পরমাণুর আওতাধীন নয়। এটা বিষয়গত প্রতিভাস নয়, বরং বিষয়ীগত সদৃশ। জ্ঞজ্ঞসত্যিকারের নীতি হচ্ছে পরমাণু এবং শূন্য; আর সবকিছু হচ্ছে ধারণা, সাদৃশ্য।ঞ্চঞ্চ জ্ঞজ্ঞশৈত্য কেবলমাত্র মতামতেই স্থিত; উষ্ণতাও থাকে মতামতেই। কিন্তু বাস্তবে আছে শুধুমাত্র পরমাণু এবং শূন্য।ঞ্চঞ্চ সে কারণে প্রকৃত অর্থে ঐক্য অনেকগুলো পরমাণু হতে আসেনা; কিন্তু তা সত্ত্বেও জ্ঞজ্ঞপরমাণুর বিন্যাসের মধ্য দিয়েই সকল কিছু ঐক্য হিসেবে প্রতীয়মান হয়।ঞ্চঞ্চ প্রত্যক্ষণ তাই সম্ভব শুধুমাত্র বুদ্ধি দিয়ে কারণ তারা ক্ষুদ্রতার কারণে দৃষ্টি ইন্দ্রিয়ের আওতার বাইরে। এ কারণে তাদেরকে এমনকি জ্ঞভাবঞ্চ বলা হয়।
অপরদিকে, সংবেদিত প্রতীয়মানতাই একমাত্র সত্য বিষয় এবং সংবেদিত প্রত্যক্ষণ হচ্ছে তা, যা যুক্তিসম্মত। যা হোক, এই জ্ঞসত্যঞ্চ জিনিস হচ্ছে পরিবর্তনশীল, অস্থায়ী প্রপঞ্চ। কিন্তু যদি বলা হয় প্রপঞ্চটি হচ্ছে সত্য জিনিস, তবে তা হবে পরস্পরবিরোধী। যা একদিকে এক, তা-ই অপরদিকে বিষয় ও বিষয়ী তৈরী করছে। এই পরস্পর বিরোধিতা তাই আলাদা মনে হয়, যেন দুই জগতের মাঝে বিভক্ত। ডেমোক্রিটাস সংবেদিত বাস্তবতাকে বিষয়ীগত সাদৃশ্যে নিয়ে যান। কিন্তু বিষয় জগতে নিষিদ্ধ এই বিরোধাভাসটি এখন তাঁর আত্ম-চৈতন্যে বিরাজমান; যেখানে পরমাণুর ধারণা এবং সংবেদিত প্রত্যক্ষণ শত্রুর মতো পরস্পরের মুখোমুখি। এভাবে ডেমোক্রিটাস বিরোধাভাসটি থেকে পালাতে পারেন নি। এখনও এর ব্যাখ্যা দেবার সময় আসেনি। আপাঃতত এটাই জেনে রাখা যথেষ্ট যে, আমরা এর অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারি না।
এখন এপিকিউরাসের কথা শোনা যাক। তিনি বলেন, জ্ঞঞ্চানী লোক সন্দেহবাদী নয়; বরং একটি অন্ধ মতবাদে অবস্থান নেনঞ্চ। হ্যাঁ, ঠিক এটাই তাকে অন্যদের চেয়ে উঁচুতে নিয়ে যায়, কারণ তিনি দৃঢ়ভাবেই জানতেন জ্ঞজ্ঞসকল অনুভূতিই সত্যের পূর্ব প্রচারক।ঞ্চঞ্চ তাঁর শাস্ত্র গ্রন্থে বলা আছে জ্ঞজ্ঞএখানে এমন কিছুই নেই, যা সংবেদনকে খন্ডন করবে; এমন কিছুই তেমন কিছুকে খন্ডন করতে পারে না। কারণ তাদের বৈধতা সমান। কারণ, তারা একই জিনিস দ্বারা পরীক্ষিত নয়। ধারণার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যেহেতু এটা সংবেদিত প্রত্যক্ষণের উপর নির্ভরশীল।ঞ্চঞ্চ কিন্তু ডেমোক্রিটাস যখন সংবেদন জগতকে বিষয়ীগত সাদৃশ্যের দিকে নিয়ে যান, এপিকিউরাস এর মোড় বিষয়গত প্রতিভাসের দিকে ঘুরিয়ে দেন। আর তিনি তা করেন খুব সচেতনভাবে; যেহেতু তিনি দাবি করেন যে, তিনিও একই নীতিগুলো মানেন, তবে সংবেদিত গুণকে নিছক ধারণায় নামিয়ে আনেন না।
যেহেতু সংবেদনই ছিল এপিকিউরাসের মাপকাঠি, যেহেতু বিষয়গত প্রতিভাস এর সাথে সম্পর্কিত, তাই আমরা সঠিক উপসংহারে পৌঁছে যেতে পারি- যাতে কিকেরো কাঁধ ঝাঁকিয়ে ছিলেন:
জ্ঞডেমোক্রিটাসের কাছে সূর্যকে বড় মনে হয়েছে, কারণ তিনি বিঞ্চানের লোক এবং জ্যামিতিতে দক্ষ। এপিকিউরাসের কাছে এটি প্রায় দুই ফুট বড়; কারণ তিনি বলেন, এটা ততটাই বড়, ঠিক যতটা মনে হয়।ঞ্চ
খ) বিঞ্চানের নিশ্চয়তা ও এর বিষয়ের সত্যতা সম্বন্ধে ডেমোক্রিটাস এবং এপিকিউরাসের তাত্ত্বিক মূল্যায়নের এই পার্থক্য এই দুঞ্চজনের বৈঞ্চানিক শক্তিমত্তা অনুশীলনে প্রদর্শিত হয়।
ডেমোক্রিটাসের জন্য নীতি প্রতিভাসে প্রবেশ করে না। তিনি বাস্তবতা ও অস্তিত্ব ছাড়াই থাকেন। অন্যদিকে এটা সবকিছু নিয়েই বাস্তব জগতের হিসেবে সংবেদনের জগতের মুখোমুখি হয়। এটা সত্যি যে, এই জগত বিষয়ীগত সদৃশ। কিন্তু ঠিক এ কারণেই এটা তার নিজের নীতি থেকে বিচ্ছিন্ন রয়ে তার নিজস্ব স্বাধীন বাস্তবতায় থেকে যায়। একই সময়ে এটা অদ্বিতীয় বাস্তব বিষয় এবং এই রূপে এর মূল ও বৈশিষ্ট্য আছে। ডেমোক্রিটাস তাই পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণের দিকে চলে যান। দর্শনে তৃপ্ত না হয়ে নিজেকে তিনি দৃষ্ট ঞ্চানের কোলে ছুঁড়ে দেন। আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি যে, কিকেরো তাঁকে একজন জ্ঞবিঞ্চানের মানুষঞ্চ বলে অভিহিত করেছেন। পদার্থবিদ্যা, নীতিবিদ্যা, গণিত শাস্ত্র, অতি বিস্তৃত তথ্যপূর্ণ শিক্ষা, প্রতিটি কলাতে তাঁর বিশ্বকোষীয় দক্ষতা ছিল। ডায়োজেনিস লেরটিয়াসকৃত (তাঁর) বইয়ের তালিকাটি একাই তাঁর পান্ডিত্যের সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু পান্ডিত্যের বৈশিষ্ট্যই যেহেতু প্রস্থে ছড়ানো আর বাইরে থেকে খোঁজ আর সংগ্রহ করা, তাই আমরা দেখি যে, অভিঞ্চতা, ঞ্চানার্জন এবং পর্যবেক্ষণের জন্য ডেমোক্রিটাস দীর্ঘ পথে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক ঘুরে ফেলেছেন।
তিনি (ডেমোক্রিটাস) দম্ভ করে বলেন, জ্ঞআমার সমসাময়িকদের মধ্যে একমাত্র আমিই দূরবর্তী জিনিসের অনুসন্ধান করে দীর্ঘ পথে পৃথিবীর বড় অংশই ঘুরেছি। আমি সবচেয়ে বেশি জলবায়ু এবং ভূমি দেখেছি। আমি সবচেয়ে ঞ্চানী ব্যক্তিদের কথা শুনেছি। এবং রেখা সম্বন্ধীয় বিন্যাসের সুস্পষ্ট প্রমাণের ক্ষেত্রে কেউই আমাকে অতিক্রম করতে পারবে না; এমন কি তথাকথিত মিশরীয়রাও নয়।ঞ্চ
ডিমেট্রিয়াস জ্ঞহোমোনিমোইসঞ্চ (একই নামের মানুষেরা) এবং এন্টিসথেনেস জ্ঞদায়াদোকাইমাঞ্চ (দার্শনিকদের অনুসারীগণ)-এ বলেন যে, তিনি (ডেমোক্রিটাস) মিশরে ধর্মযাজকদের কাছে জ্যামিতি শেখার জন্য গিয়েছিলেন। তিনি পারস্যে, ক্যালডিয়দের মাঝেও ভ্রমণ করেন; তারপর তিনি পৌঁছে যান লোহিত সাগরে। কারও কারও মতে, ভারতে যোগী-সন্ন্যাসীদের সাথেও তাঁর দেখা হয়েছিল; এবং ইথিওপিয়াতেও তিনি পা রেখেছেন। একদিকে ঞ্চানের লালসা তাকে স্থির হতে দেয়নি, আবার একই সময়ে সত্য নিয়ে অতৃপ্তি, মানে দার্শনিকতা, ঞ্চান তাঁকে অনেক ঘুরিয়েছে। যে ঞ্চান তিনি সত্য বলে ধরে নিয়েছেন, তা আধেয় বস্তু বিহীন; আর যে ঞ্চান তাকে আধেয় বস্তু দিয়েছে, তা সত্য বিহীন। এটা উপকথা হতে পারে; কিন্তু তা সতিকারের উপকথা, প্রাচীনদের কাহিনী। এটা তাঁর মধ্যে পরস্পরবিরোধী উপাদানগুলোর একটি চিত্র দাঁড় করায়। ডেমোক্রিটাস নিজেকে নিজেই অন্ধ করার ইচ্ছা পোষণ করতেন, যাতে চোখের সংবেদনশীল রশ্মি মেধার তীক্ষ্ণতাকে অন্ধকারে ঢেকে ফেলতে না পারে।
কিকেরো বলেছিলেন, এই মানুষটাই অর্ধেক পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়েছেন, কিন্তু যা খুঁজেছিলেন তা পান নি।জ্ঞএর বিপরীত চিত্রঞ্চ এপিকিউরাসের রূপ ধরে এসে দাঁড়ায় আমাদের সামনে।
এপিকিউরাস দর্শনেই আশীর্বাদধন্য আর সুখী।
তিনি বলেন, জ্ঞজ্ঞদর্শনের সেবা করা উচিত, যাতে প্রকৃত মুক্তিই তোমার নিয়তি হয়। যে নিজেকে তার সঙ্গী করে এর কাছে আত্ম- সমর্পণ করেছে, সে অপেক্ষা না করে তখনই মুক্তি পেয়েছে। কারণ দর্শনের সেবাই মুক্তি।ঞ্চঞ্চ এ মতোই আরো বলেন, জ্ঞজ্ঞযখন যুবক তখন যেন দর্শন পাঠে বিলম্ব, আর বৃদ্ধকালে যেন সেই পাঠে ক্লান্তি না আসে। কারণ আত্মার সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে এত পূর্বে বা বিলম্বে আর কেউ কাজে আসে না। যে বলে, দর্শনের জন্য সময় এখনও আসেনি অথবা চলে গেছে সে যেন ঠিক সেই লোকটির মতো, যে বলে, তার কাছে সুখের দিন কখনো আসে নি অথবা এলেও পাশ কাটিয়ে চলে গেছে।ঞ্চ
দর্শনে অতৃপ্তি নিয়ে ডেমোক্রিটাস যখন নিজেকে পরীক্ষামূলক ঞ্চানের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছেন, এপিকিউরাস তখন দৃষ্ট বিঞ্চানকে অবঞ্চা ছাড়া কিছুই করেন নি। কারণ তাঁর মত এই যে, তাঁরা পরিপূর্ণ সত্যে কোন অবদানই রাখে নি। তাঁকে বিঞ্চানের একজন শত্রু ও ব্যাকরণ উপেক্ষাকারী বলে ডাকা হয়। তিনি অঞ্চ বলেও অভিযুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু কিকেরোর লেখায় একজন এপিকিউরিয় বলেন, জ্ঞজ্ঞএপিকিউরাস পান্ডিত্যহীন ছিলেন না। বরং তারাই অঞ্চ- যারা বিশ্বাস করে না যে, যা না জানা কোন বালকের জন্য লজ্জাজনক, তা একজন বৃদ্ধ লোকও পাঠ করে।
কিন্তু ডেমোক্রিটাস যখন মিশরীয় ধর্মযাজকদের, পারস্যে, ক্যালডিয়ানদের এবং ভারতের যোগী সন্ন্যাসীদের কাছে শিখছিলেন, তখন শিক্ষক না থাকার কারণে, স্ব-শিক্ষিত হবার জন্য এপিকিউরাস নিজেই গর্ববোধ করেন। সেনেকার মতে, তিনি বলেন, কিছু মানুষ আছে, যারা কোন সহায়তা ছাড়াই সত্যর জন্য লড়াই করে। এদের মধ্যে সে নিজেই তার পথ খুঁজে বের করে। আর এই স্ব-শিক্ষিতদেরই তিনি বেশি প্রশংসা করেন। তাঁর কাছে বাকীরা হচ্ছে দ্বিতীয় সারির মানসিকতার। যখন ডেমোক্রিটাস দাবড়ে বেড়াচ্ছেন পৃথিবীময়, তখন এপিকিউরাসও এথেন্সের তার বাগান ছেড়ে আয়োনিয়া গিয়েছেন; তবে পড়াশোনার জন্য নয়, বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। শেষ পর্যন্ত ডেমোক্রিটাস ঞ্চান-আহরণে নিরাশ হয়ে নিজেকে যখন অন্ধ করে ফেললেন, এপিকিউরাস তখন মৃত্যুর ঘন্টা শুনতে শুনতে গরম পানিতে গোসল করেন, খাঁটি মদ আনতে বলেন আর বন্ধুদের সুপারিশ করেন, যাতে তারা দর্শনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে।
গ) এখন আমরা যে পার্থক্য নির্ণয় করেছি তাকে দুই দার্শনিকের আকস্মিক স্বতন্ত্রতা বলে চিহ্নিত করা উচিত হবে না। তাঁরা বিপরীত দুঞ্চটি প্রবণতার প্রতিনিধিত্ব করেন। উপরের অনুচ্ছেদে ব্যবহারিক শক্তির পার্থক্যকে তাত্ত্বিক সচেতনতার পার্থক্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে।
সবশেষে আমরা প্রতিফলনের আঙ্গিক বিবেচনা করব, যা সত্তার সাথে চিন্তার সম্পর্ক এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক প্রকাশ করে। দার্শনিক জগত এবং চিন্তার মাঝে যে সাধারণ সম্পর্ক তিনি দেখতে পান সেখানে কেবল তিনি নিজের জন্য বিষয় তৈরী করে, যা বাস্তব জগতে তার নিজস্ব বিশেষ চৈতন্য।
ডেমোক্রিটাস প্রামান্যতা ব্যবহার করেছেন বাস্তবতার প্রতিফলনের একটি আঙ্গিক হিসেবে। এরিস্টটল তাঁর সম্পর্কে বলেন যে, তিনি (ডেমোক্রিটাস) সবকিছুর মধ্য প্রামানিকতা খুঁজতেন। ডায়োজেনিন লেরটিয়াস বলেন যে, ডেমোক্রিটিয় প্রামানিকতা হচ্ছে পরমাণুর আবর্ত, সবকিছুর উৎস। ঈন সরতদভঢ়ভড় সবভরষড়ষসবষক্ষয়ল-এর লেখক এর আরো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিয়েছেন:
ডেমোক্রিটাস অনুসারে প্রামানিকতা হচ্ছে ভাগ্য এবং আইন, জগতের স্রষ্টা এবং দূরদর্শিতা। কিন্তু এই প্রামানিকতার সারবস্তু হচ্ছে বস্তুর প্রতি- আকার, সঞ্চালন ও স্পন্দন।
একই ধরণের অনুচ্ছেদ খুঁজে পাওয়া যাবে স্টোবিয়াসের নির্বাচিত পদার্থবিষয়ক রচনা এবং য়ুসেবিয়াসের ষষ্ঠ বই ঙক্ষতনসতক্ষতঢ়ভষ নৎতশফনরভদত-তে। স্টোবিয়াসের নির্বাচিত নীতিবিদ্যার রচনাতে ডেমোক্রিটাসের এই প্রবচনটি দেয়া আছে : জ্ঞমানুষ নিজের জন্য সুযোগের মায়া তৈরী করতে পছন্দ করে। আদতে সুযোগ স্বচ্ছ চিন্তার সাথে বেমানান, এটাই তাদের হতবুদ্ধিতার প্রকাশ।ঞ্চ এই প্রবচনটির প্রায় পুরোপুরি পুনরাবৃত্তি হয়েছে য়ুসেবিয়াসের চতুর্দশতম বইতে। একই ভাবে সিমপ্লিকাস ডেমোক্রিটাসের উপর একটা অনুচ্ছেদ জ্ঞআরোপঞ্চ করেন, যেখানে এরিস্টটল সুযোগ বিনষ্টকারী প্রাচীন তত্ত্বের কথা বলেছেন।
এপিকিউরাসের সাথে এটি মিলিয়ে দেখা যাক:
জ্ঞপ্রামানিকতাকে কেউ কেউ পরম নিয়ন্ত্রক বলেছেন, আদতে এর অস্তিত্বই নেই। কিছু জিনিস আকস্মিক; আর অন্য সব আমাদের স্বেচ্ছাচারী ইচ্ছা-প্রসূত। প্রামানিকতা প্রেরণা যোগাতে পারে না; কারণ সুযোগ হচ্ছে অস্থায়ী। পদার্থবিদদের করা বিধানের দাস হয়ে থাকার চেয়ে দেবতাদের পুরাণ অনুসরণ করা অনেক ভালো। জ্ঞদেবতাদের সম্মান করলে তারা আমাদের সম্মান করবেঞ্চ অতীতে ত্যাগ করা এই আশার জন্য শেষোক্তটি হচ্ছে একটি অপ্রতিরোধনীয় প্রামানিকতা। কিন্তু এটা হচ্ছে সুযোগ, যা অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত, ঈশ্বর নয়। যদিও জনতা তাই বিশ্বাস করে।ঞ্চঞ্চ জ্ঞজ্ঞপ্রামানিকতার মধ্যে বসবাস দূর্ভাগ্যজনক; কিন্তু প্রামানিকতার মধ্যে বসবাস কোন প্রামানিকতা নয়। সব দিকেই খোলা আছে যুক্তির সংক্ষিপ্ত, সহজ পথগুলো। সে কারণে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে, কেউই নিজের জীবনে চিরকাল টিকে থাকতে পারে না। এটা নিজেই প্রামানিকতাকে বশীভূত করার অনুমোদন পেয়ে গেছে।ঞ্চ
কিকেরোর লেখাতে এপিকিউরিয় ভিলিয়াস বৈরাগ্যবাদী দর্শন সম্পর্কে একই ধরণের কথা বলেন:
জ্ঞযে দর্শন একজন অঞ্চ বৃদ্ধ মহিলার মতো সবকিছু ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেয়, তাকে নিয়ে আমরা কি চিন্তা করব? ......... এপিকিউরাস আমাদেরকে পুনরুদ্ধার করেন, মুক্তি দেন।ঞ্চ
এভাবে এপিকিউরাস (এমনকি) বিয়োজক সিদ্ধান্তকেও এমনভাবে অস্বীকার করেন, যেন প্রামানিকতার কোন ধারণার স্বীকৃতি দিতে না হয়।
এটা সত্যি, ডেমোক্রিটাসও সুযোগের ধারণা ব্যবহার করেছেন- এই দাবি করা হয়। কিন্তু সিমপ্লিসিয়াসে এ ব্যাপারে যে দুঞ্চটো অনুচ্ছেদ আছে তার একটি পড়লে অন্যটিকে সন্দেহ হয়। কারণ এটা পরিস্কারভাবেই দেখায় যে, ডেমোক্রিটাস সুযোগের ক্যাটাগরি ব্যবহার করেন নি। কিন্তু পরিণামে সিমপ্লিসিয়াস তাঁর উপর এটা আরোপ করেন। তিনি বলেন: সাধারণভাবে বললে ডেমোক্রিটাস এই জগত সৃষ্টির কোন কারণ চিহ্নিত করতে পারেন নি; তাই তিনি সুযোগকে কারণ হিসেবে ব্যবহার করেন।
যা হোক, আধেয় বস্তুর নির্ধারণ সম্বন্ধে এখানে আমাদের জানা নেই। কিন্তু এটা জানা আছে যে, ডেমোক্রিটাস সচেতনভাবেই এই আঙ্গিক ব্যবহার করেছিলেন। অবস্থা অনেকটা য়ুসেবিয়াসের বর্ণনার অনুরূপ। সে মতে ডেমোক্রিটাস সুযোগকে সার্বজনীনতা এবং দৈবিকতার নিয়ন্ত্রক হিসেবে দাঁড় করিয়ে দাবি করেন যে, সুযোগ বশেই সব কিছু ঘটে। আবার তিনিই সুযোগকে মানব জীবন ও অভিঞ্চতাবাদী চরিত্র হতে বাদ দিয়ে এর সমর্থকদের বোকা বলেন।
আংশিকভাবে এই বিবৃতিতে কেবলমাত্র খৃষ্টান বিশপ ডায়োনিসিয়াস এর জোর করে শেষ করার বাসনা দেখতে পাই। আংশিকভাবে বিশ্বজনীনতা এবং ঐশ্বরিকতা যেখান থেকে শুরু, সেখান থেকেই ডেমোক্রিটাসীয় প্রামানিকতার ধারণা সুযোগ ধারণা হতে পার্থক্য হারানো শুরু করে।
এটা ঐতিহাসিকভাবে আরো নিশ্চিত: ডেমোক্রিটাস প্রয়োজনকে এবং এপিকিউরাস সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন। এবং তাঁরা প্রত্যেকেই বিতর্কমূলক উত্তেজনা নিয়ে একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গিকে উপেক্ষা করেন।
এই পার্থক্যের প্রধান ফলাফল স্বতন্ত্র দৈহিক প্রপঞ্চের মধ্য দিয়ে আবির্ভূত হয়; তা ব্যাখ্যা করা আছে।
প্রামাণিকতা সসীম প্রকৃতিতে জ্ঞআপেক্ষিক প্রামাণিকতাঞ্চ হিসেবে আবির্ভূত হয়; আবির্ভূত হয় নির্ধারণবাদ হিসেবে। আপেক্ষিক প্রামাণিকতা শুধুমাত্র সম্ভাবনা থেকে অনুমান করা সম্ভব। যেমন এটা হচ্ছে অবস্থা, কারণ, যুক্তি ইত্যাদির জ্ঞজালের মতো সংযোগঞ্চ, যে উপায়ে প্রামাণিকতা নিজেকে প্রকাশ করে। বাস্তব সম্ভাবনা যেন আপেক্ষিক প্রামাণিকতার ব্যাখ্যা সাধ্যতা। এবং আমরা এটাকে ডেমোক্রিটাসে খুঁজে পাই। আমরা সিমপ্লিসিয়াসের কিছু অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করি:
জ্ঞকেউ যদি তৃষ্ণার্ত হয়ে পান করে আগের চেয়ে ভালো বোধ করে, তবে ডেমোক্রিটাস সুযোগ নয়, তৃষ্ণাকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করবেন। যদিও মনে হয় যে, তিনি সুযোগকে জগত সৃষ্টির কারণ বলে গণ্য করেছেন। তবে তিনি বলেন যে, সুযোগ পেলে কোন বিশেষ কিছুর কারণ নয়, বরং তা বিরুদ্ধভাবে অন্যান্য কারণে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এমন করে উদাহরণ দিলে গুপ্তধন খুঁজে পাওয়ার কারণ হচ্ছে মাটি খোঁড়া আর বেড়ে ওঠা হচ্ছে জলপাই গাছের অস্তিত্বের কারণঞ্চ।
প্রকৃতিতে পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে বিশ্লেষণের এই পদ্ধতি যে প্রবল আগ্রহ আর ঐকান্তিকতা নিয়ে ডেমোক্রিটাস অবতারণা করেছেন, কারণ বিবৃত করার যে গুরুত্ব তিনি আরোপ করেন, তা সরলভাবে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর স্বীকারোক্তিতে:
জ্ঞআমি পারস্যের সিংহাসন অর্জনের চেয়ে বরং নতুন একটি নিদান তত্ত্বের উন্মোচন করতে চাইবো।ঞ্চ
আরও একবার ডেমোক্রিটাসের সরাসরি বিপক্ষে অবস্থান নিলেন এপিকিউরাস। তাঁর কাছে সুযোগ হচ্ছে বাস্তবতা, যার শুধুমাত্র সম্ভাবনার মূল্য আছে। যা হোক, অমূর্ত সম্ভাবনা বাস্তব সম্ভাবনার সরাসরি বিপ্রতীপ। শেষোক্তটি তীক্ষ্ণ পরিধির মধ্যে সীমায়িত; যেমন- মেধা। পূর্বতনটি পরিধিহীন, কল্পনার মতো। বাস্তব সম্ভাবনা বিষয়গত অত্যাবশ্যকীয়তা এবং বাস্তবতার ব্যাখ্যার সন্ধান করে। আর অমূর্ত সম্ভাবনায় যে বিষয় ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সে ব্যাপারে উৎসুক নয়। বরং সেই বিষয়ীতে উৎসুক, যা ব্যাখ্যা করে। বিষয়টি শুধুমাত্র সম্ভাব্য এবং কল্পনাযোগ্য হলেই চলে, যা অমূর্তভাবে সম্ভব, ধারণা করা সম্ভব, এবং যা কোন বিষয়ের চিন্তার বিঘ্ন ঘটাবে না, কোন সীমাবদ্ধতা বা হোঁচট খাওয়ার মতো কোন বাঁধা স্থাপন করবে না। এই সম্ভাবনা বাস্তব কিনা তা অপ্রাসঙ্গিক; এবং এখানে আগ্রহটি বিষয় হিসেবে বিষয় পর্যন্ত গড়ায় না।সে কারণে এপিকিউরাস আলাদা পদার্থগত প্রপঞ্চগুলোর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সীমাহীন উদাসীনতা নিয়ে এগিয়েছেন।
পিথক্লেসকে লেখা চিঠি দিয়ে এ বিষয়ের উপর আরও আলোকপাত করা যায়- তবে তা পরে বিবেচনা করা হবে। আপাততঃ প্রথমদিককার পদার্থবিদদের সম্পর্কে এপিকিউরাসের মতামতই এখানে যথেষ্ট। ঈন ঙরতদভঢ়ভড় সবভরষড়ষসবষক্ষয়ল-এর লেখক এবং স্টোবিয়াস এখানে তারকারাজি, সূর্যের আকার-আকৃতি এবং একই ধরণের বস্তুর মর্মার্থ সম্বন্ধে দার্শনিকদের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এখানে উদ্ধৃত করেছেন। এপিকিউরাসের সম্পর্কে বলা হয়, তিনি এই মতামতগুলোর কোনটিকেই অগ্রাহ্য করেন নি। সবগুলো সঠিক হতে পারে; যেটা সবচাইতে সম্ভবপর, সেটাকেই তিনি সম্মান করতেন। এটা ঠিক যে, এপিকিউরাস যুক্তিগ্রাহ্য নিশ্চয়তার বিরুদ্ধেও বিতর্ক তুলেছিলেন। যথাযথভাবে বলতে গেলে, এর কারণ ছিল এক পাক্ষিক, বাস্তব সম্ভাবনার মাধ্যমে ব্যাখ্যা পদ্ধতি।
এভাবে, সেনেকা তাঁর চয়নড়ঢ়ভষশ শতঢ়য়ক্ষতরড়-এ বলেছেন: এপিকিউরাস মনে করতেন যে, এই সকল কারণই সম্ভব; এবং তারপর তিনি অন্য ব্যাখ্যা সংযোজনের চেষ্টা করেন। যারা মনে করে তাদের মধ্যে বিশেষ কোন একটিই ঘটে, এপিকিউরাস তাদেরকে র্ভৎসনা করেন। কারণ শুধুমাত্র অনুমান থেকে যার অনুমান করা যায়, তার ক্ষেত্রে স্বতঃসিদ্ধ সিদ্ধান্ত অবিবেচকের মতো হবে।
বিষয়ের মূল কারণগুলো খুঁজে বের করার জন্য কেউ কোন আগ্রহ নাও পেতে পারে। আসল কথা হল ব্যাখ্যাকৃত জিনিসটার প্রশান্তি বা ধীরতা। যেহেতু যা কিছু সম্ভব তাকে সম্ভব বলেই মানা হয়, তাই যা অমূর্ত তা সম্ভাবনার চরিত্রের সাথে সম্পৃক্ত। সত্তার সুযোগ পরিস্কারভাবে শুধুমাত্র চিন্তার সুযোগে স্থানান্তরিত হয়। যে একমাত্র নিয়মটি এপিকিউরাস নির্দেশ করে গেছেন, জ্ঞজ্ঞব্যাখ্যার সাথে সংবেদনের দ্বন্দ্ব হওয়া উচিত নয়,ঞ্চঞ্চ তা স্ব-প্রত্যক্ষ। কারণ অমূর্ত সম্ভাবনা সুসঙ্গত এবং যথাযথভাবে দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত যেহেতু অমূর্তভাবে সম্ভব হওয়া মানে সত্তার মাঝে কোন দ্বন্দ্ব তৈরী না হওয়া; অতএব তা পরিহার্য। এপিকিউরাস শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেন যে, তার ব্যাখ্যার লক্ষ্যের পদ্ধতি শুধুমাত্র আত্ম-চৈতন্যের বিষয়-বৈরাগ্য, নিজের জন্য ও নিজের ভেতরে প্রকৃতির ঞ্চানের জন্য নয়। এবং এক্ষেত্রেও এটা স্বচ্ছ যে, এপিকিউরাস ডেমোক্রিটাসের চেয়ে স্বতন্ত্র।
এভাবে, প্রতিটি পদক্ষেপেই আমরা এ দুঞ্চজনের পরস্পর বিরোধিতা দেখতে পাই। এদের একজন সন্দেহবাদী, অন্যজন মতাদি সম্পর্কে অন্ধবিশ্বাসী। একজন বিষয়ীগত সাদৃশ্যে সংবেদিত জগতকে বিবেচনা করেন, অন্যজন বিবেচনা করেন বিষয়গত আবির্ভাব দিয়ে। যে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতকে বিষয়ীগত সাদৃশ্য বলে বিবেচনা করে, সে নিজেকে অভিঞ্চতাবাদী প্রাকৃতিক বিঞ্চান এবং দৃষ্ট ঞ্চানে নিয়োজিত করে, আর সর্বত্র বিরামহীন পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ, শিক্ষা উপস্থাপন করে। অন্যজন প্রপঞ্চের জগতকে বিবেচনা করে বাস্তব বলে আর উপেক্ষা করে অভিঞ্চতাবাদ, নিজের মধ্যে প্রদর্শন করায় নিজের মাঝেই তৃপ্ত চিন্তার সৌম্যতা। যে তার ঞ্চানকে নিয়ে আসে নিজের ভেতরকার নীতি হতে। কিন্তু এই দ্বন্দ্ব আরো অনেক দূর গড়ায়। একদিকে একজন সন্দেহবাদী ও অভিঞ্চতাবাদী, যিনি সংবেদনগত প্রকৃতিকে বিষয়ীগত সাদৃশ্য বলে মনে করেন, এটাকে প্রামানিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করেন, জিনিসের মূল অস্তিত্বকে বুঝতে চেষ্টা করেন। আর একজন অন্যদিকে দার্শনিক এবং মতবাদে অন্ধ বিশ্বাসী, যিনি প্রতিভাসকে বাস্তব বলে বিবেচনা করেন। তিনি সর্বত্রই শুধু সুযোগ দেখতে পান এবং তাঁর বিশ্লেষণ পদ্ধতি সকল বিষয়গত প্রকৃতির বাস্তবতাকে নিছক অস্বীকার করতে চায়। এই দ্বন্দ্বগুলোতে নিশ্চিতরূপে অবান্তরতা আছে বলে মনে হয়।
এটা সাহস করে বলা কঠিন যে, একে অপরের বিপক্ষে লেগে থাকা এই দুঞ্চজন জ্ঞএকটি এবং একইঞ্চ তত্ত্বের গুণগ্রাহী। কিন্তু তারপরও তাঁরা একে অপরের সাথে শৃঙ্খলাবদ্ধ।
পরবর্তী অংশের বিষয় হচ্ছে সাধারণভাবে তাদের সম্পর্ক অনুধাবন করা।

পরবর্তী অংশ