Marxists Internet Archive
Bangla Section


ডেমোক্রেটিয় ও এপিকিউরিয় প্রকৃতির দর্শনের পার্থক্য

কার্ল মার্কস


সূচীপত্র

পরিশিষ্ট: এপিকিউরিয়াসের ধর্মতত্বের বিরুদ্ধে প্লুটার্কের তর্কের পর্যালোচনা (ছিন্ন অংশ )

বিধান এবং অপদস্ত ঈশ্বর:
(৯) জ্ঞযে একজন বিষয়গত ঈশ্বরকে জানে না, সে নয়; বরং যে জানতে চায়, সেই দূর্বল মেধার।ঞ্চ (শেলিঙ- জ্ঞমতান্ধতা এবং সমালোচনা প্রসঙ্গে দার্শনিক পত্রাবলীঞ্চ)
জনাব শেলিঙকে যেকোনভাবে আরেকবার তাঁর প্রথমদিককার লেখাগুলোর দিকে নজর দিতে বলা উচিত। যেমন তাঁর জ্ঞদর্শনের নীতি হিসেবে অহংঞ্চ প্রবন্ধে দেখতে পাই:
উদাহরণস্বরূপ, যতদূর তিনি বিষয় নির্ধারিত, সেই ঈশ্বরকে ভাবা যাক আমাদের জানার প্রকৃত ভিত্তি হিসেবে, তাহলে তিনি (যতদূর পর্যন্ত তিনি বিষয়) আমাদের জ্ঞজানাঞ্চতে নিজেরই অন্তর্গত; আর তাই আমাদের জন্য হতে পারেন না সেই চূড়ান্ত বিন্দু- যাতে এই সমগ্র বলয় স্থিত।
সবশেষে জনাব শেলিঙকে স্মরণ করাই তাঁর সদ্য উদ্ধৃত চিঠির শেষ বাক্যটি:
জ্ঞসময় এসেছে মানবতার সবচাইতে বড়ভাগ- মনের স্বাধীনতার প্রকাশ্য ঘোষণার, সঙ্গে এও ঘোষণা করতে হবে যে, মুক্ত হলে শেকল হারানোর মাতমও আর সহ্য করা যাবে না।ঞ্চ
১৭৯৫- তেই যখন সেই সময় এলো, আজ ১৮৪১ এর ব্যাপারে কি বলা হবে?
এ উপলক্ষে একটি বিষয়ের অবতারণা করা যাক, যা ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ হিসেবে কুখ্যাত হয়েছে। হেগেল এই সকল ধর্মতত্ত্বগত প্রমাণসমূহকে পুরো উল্টে দেন; মানে হচ্ছে, তিনি তাদেরকে ন্যায়সঙ্গত করার খাতিরে তাদের প্রত্যাখ্যান করেন। তারা কেমন মক্কেল যে, তাদের পক্ষের উকিল নিজে তাদের হত্যা করেই শুধুমাত্র তাদেকে দন্ড থেকে বাঁচাতে পারেন? দৃষ্টান্তস্বরূপ হেগেল ঈশ্বর থেকে জগত- এই উপসংহারের ব্যাখ্যা দেন যে মানে করে, তা বোঝায়: জ্ঞযেহেতু আকস্মিকতার অস্তিত্ব নেই, সেহেতু ঈশ্বর অথবা পরম অস্তিত্বশীলঞ্চ ঈশ্বরই আকস্মিকতার জগতের জামিনদার। এটা সুনিশ্চিত যে, এর মাধ্যমে এর উল্টোটাও বর্ণিত হয়েছে।
ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণসমূহ হয়তো কেবলমাত্র অসার বা শূন্যগর্ভ পুনরুক্তি। দৃষ্টান্তস্বরূপ একটি তাত্ত্বিক প্রমাণ নেয়া যাক। এটি শুধুমাত্র বোঝায়:
জ্ঞযা আমি বাস্তব পদ্ধতিতে নিজের মধ্যে ধারণ করি, তা-ই আমার জন্য বাস্তব ধারণা।ঞ্চ
এটা এমন জ্ঞকিছু একটাঞ্চ বোঝায়, যা আমার উপর ক্রিয়াশীল। এ বোধ থেকে, প্যাগান হোক অথবা খৃষ্টান হোক- সব দেবতাই বাস্তব অস্তিত্বের অধিকারী। প্রাচীন জ্ঞমলখঞ্চ কি প্রভুত্ব করে নি? ডেলফির এপোলো কি গ্রীকদের জীবনে একটি বাস্তব শক্তি ছিল না? এ বিচারে কান্টের সমালোচনার কোন মানেই নেই। কেউ একজন যদি কল্পনা করে যে, তার একশটি টাকা আছে, যদি এই ধারণা তার জন্য স্বেচ্ছাচারী না হয়ে বরং বিষয়ীগত হয়, যদি সে এতে বিশ্বাস করে, তাহলে এই শঞ্চখানেক কল্পিত টাকা তার কাছে শঞ্চখানেক সত্যিকারের টাকার সমান মূল্য পাবে। দৃষ্টান্তস্বরূপ সে তার এই কল্প-দৃষ্টির শক্তিতে ঋণ কাঁধে তুলে নেবে; যেভাবে সকল মানবজাতি বয়ে চলেছে তাদের স্ব স্ব দেবতাদের (ঋণ)। এই বৈপরীত্যটি খাঁটি। কান্টের উদাহরণ তাত্ত্বিক প্রমাণকে জোরদার করতে পারে। কল্পিত দেবতাদের ততটাই অস্তিত্ব আছে, যতটা আছে কল্পিত টাকার। মানুষের সার্বজনীন অথবা সাধারণ কল্প-দৃষ্টি ছাড়া বাস্তব টাকার কোন অস্তিত্ব আছে কি? যদি এমন কোন দেশে কাগজের টাকা এনে হাজির কর যেখানে কেউই এর ব্যবহার জানে না, তাহলে সেখানে প্রত্যেকেই তোমার বিষয়ীগত কল্প-দৃষ্টিকে উপহাস করবে। তোমার দেবতাদের নিয়ে যাও এমন এক দেশে, যেখানে অন্য দেবতাদের অর্চনা করা হয়; তোমাকে বলা হবে উদ্ভটত্ব এবং অমূর্ততার শিকার। যিনি প্রাচীন গ্রীকদের সামনে কোন এক ভিনদেশী দেবতাকে হাজির করেন, তিনি এই দেবতার অনস্তিত্বের প্রমাণ পেয়ে যাবেন। প্রকৃতপক্ষে, গ্রীকদের জন্য সেই দেবতার অস্তিত্ব নেই। এক দেশের দেবতার যেমন অন্যদেশে অস্তিত্ব নেই, তেমনি বুদ্ধির দেশেও কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকে না।
দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে, ঐ ধরণের প্রমাণসমূহ হচ্ছে অপরিহার্য মানব-আত্ম-চৈতন্যঞ্চর অস্তিত্বের প্রমাণ, এর যৌক্তিক ব্যাখ্যাসমূহ। তাত্ত্বিক প্রমাণ এর উদাহরণ। চিন্তার বিষয় হয়ে গেলে কোন সত্তাটি প্রত্যক্ষ হয়? আত্ম-চৈতন্য।
এইভাবে নেয়া হলে, ঈশ্বরের অস্তিত্বের সকল প্রমাণই তাঁর অস্তিত্বহীনতার প্রমাণ। এগুলো ঈশ্বরের সকল ধারণারই খন্ডন। খাঁটি প্রমাণাদির এর বিপরীত বৈশিষ্ট্যও থাকা উচিত: জ্ঞযেহেতু প্রকৃতি বাজে ভাবে তৈরী, সুতরাং ঈশ্বর অস্তিত্বমানঞ্চ, জ্ঞযেহেতু এই পৃথিবী যৌক্তিকতাহীন, সে কারণে ঈশ্বর অস্তিত্বমানঞ্চ, জ্ঞযেহেতু কোন চিন্তন নেই, সেহেতু ঈশ্বর আছেনঞ্চ এগুলো আসলে একটা কথাই বলে। আর তা হলো যার জন্য জগত যৌক্তিকতাহীন, তার জন্যই ঈশ্বর অস্তিত্বমান। অথবা যৌক্তিকতায় ঘাটতি হচ্ছে ঈশ্বরের অস্তিত্ব।
জ্ঞ.......... যখন তুমি বিষয়ীগত ঈশ্বরের কল্প-চিত্রকে পূর্বেই মেনে নাও, তখন কিভাবে তুমি সেই আইনগুলোর কথা বল- যা নিজ হতে যৌক্তিকতা তৈরী করে- যেহেতু স্ব-শাসন শুধুমাত্র একটি পরম স্বাধীন সত্তারই অঙ্গীভূত হতে পারে।ঞ্চ (শেলিঙ)
জ্ঞযে কথা সবাইকে জানানো যায়, তা লুকিয়ে রাখা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।ঞ্চ (শেলিঙ)
[স্বতন্ত্র অমরতা]
[১. ধর্মীয় সামন্ততন্ত্র প্রসঙ্গে । জনতার নরক]
সমীক্ষাটি আবারও ভাগ হয়ে পড়ে যে সম্পর্কগুলোতে, তা হচ্ছে, খারাপ কাজ করনেওয়ালা আর বদমাশ, তারপর জনসাধারণ আর জ্ঞঅসভ্যঞ্চ, আর সবশেষে মার্জিত আর বুদ্ধিমানদের হতে আত্মার চলমান অস্তিত্বের মতবাদে। ইতিমধ্যে অনড় গুণগত বৈশিষ্ট্যের মাঝে এই ভাগগুলো বুঝিয়ে দেয় যে, প্লুটার্ক এপিকিউরাসকে কত সামান্য বুঝতে পেরেছেন, যে এপিকিউরাস একজন দার্শনিক হিসেবে সাধারণভাবে মানবাত্মার প্রামানিক সম্পর্কগুলো অনুসন্ধান করেন।
তারপর আবার প্লুটার্ক পাপীদের সংশোধনের উপায় হিসেবে ভয়কে উপস্থাপন করেন; আর তা দিয়ে পাতাল জগতের আতঙ্ককে সংবেদনশীল চেতনতার ক্ষেত্রে ন্যায্য করেন। আমরা আগেই তা বিচার করেছি। যেহেতু ভয়ের মধ্যে, বিশেষ করে অন্তর্গত ভয়ে (যা নির্বাপিত করা যায় না) মানুষ যেন জানোয়ার বলে নির্ধারিত; তখন কেমন করে জানোয়ারগুলোকে বশে রাখতে হয়, তা নিয়ে আমরা মোটেই মাথা ঘামাই না।
এবার আমরা লোকায়ত দৃষ্টিভঙ্গির দিকে এগোই। যদিও খুব কম লোকই এই আওতার বাইরে পড়েন; সত্য বলতে কি প্রায় সব মানুষই এই নিশানার সামনে মাথা ঝোঁকান।
জ্ঞসাধারণ মানুষেরা মৃত্যুর পরে কি হবে তা নিয়ে মোটেই ভীত নয়। পুরাণ অনুপ্রাণিত চির জীবনের আশা, আবার বেঁচে উঠার বাসনা সমস্ত আবেগের চাইতে সবচাইতে পুরানো আর শক্তিশালী। সেই আবেগ জনসমষ্টির মাঝে আনন্দ আর সুখানুভূতি সৃষ্টি করে, যা দিয়ে তারা ঐ শিশুসুলভ ভয়কে অতিক্রম করে। এরকম হলে কারুর মৃত স্ত্রী, সন্তান বা বন্ধু একেবারে চলে যাবে না, ধ্বংস হয়ে যাবে না বা একেবারে নেই হয়ে যাবে না। বরং মৃত ব্যক্তির সেই আত্মীয় তাকে এমনকি যন্ত্রণাময় অবস্থায় হলেও অন্য কোথাও অস্তিত্বমান অবস্থায় পাবে। জ্ঞমৃত মানুষ আবাস বদলে অন্য কোথাও চলে যায়ঞ্চ বা এর কাছাকাছি কোন কথা, (যা বলে যে মৃত্যু হচ্ছে আত্মার আবাস বদল, তার ধ্বংস নয়)- এরকম অভিব্যক্তি তারা অন্যদিকে সাগ্রহে শোনে.....। আবার জ্ঞসে আর নেইঞ্চ, জ্ঞসে হারিয়ে গেছেঞ্চ, জ্ঞসে ধ্বংস হয়ে গেছেঞ্চ এ ধরণের অভিব্যক্তি তাদের অস্বস্তি দেয়। যারা বলে, আমরা মানুষেরা একবারই জন্ম নিই, কেউ দ্বিতীয়বার জন্মাতে পারে না........লোকায়ত বিশ্বাস তাদের জন্য বরাদ্দ রাখে নিছক মৃত্যু। কারণ বর্তমান তাদের কাছে অনন্তের বিপরীতে খুব সামান্য, অথবা একেবারেই মূল্য ধরে না। আর তাই তারা এই বর্তমান কেটে যেতে দেয় উপভোগহীনভাবে, সৎগুণ আর কাজকে অবঞ্চা করে, নিজেদের উদ্যমহীন আর একদিনের আয়ুর প্রাণী ভেবে নিয়ে, ভেবে নিয়ে যে তারা অনিত্য, বলার মতো কিছু করার যোগ্য তারা নয়।
জ্ঞসংবেদনহীন সত্তা, যে সত্তা মিলিয়ে গেছে, তার থাকা না থাকা আমাদের কাছে অর্থহীনঞ্চ এই মতবাদ মৃত্যু ভয়কে তিরোহিত করার বদলে সুনিশ্চিত করে। কারণ ঠিক এই প্রকৃতিই মানুষের আত্মাকে এমন কিছুতে গুম করে দেয়, যেখানে চিন্তা নেই, সংবেদন নেই। এপিকিউরাস এটাকে পরমাণু আর শূন্যতায় ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের অমরত্বের বাসনাকে আরো বেশি ধ্বংস করেন, যে বাসনার জন্য সকল নর-নারী অজস্রবার নরকের কুকুরের মুখে ছিন্ন ভিন্ন হতে রাজি; শুধু যেন তারা অস্তিত্বমান থাকতে পারে, নিশ্চিহ্ন হয়ে না যায়।ঞ্চ (প্লুটার্ক)
পূর্বের আর এই ক্যাটেগরির কোন গুণগত পার্থক্য নেই। প্রথমটাতে যা আবির্ভূত হয়েছে জান্তব ভয়ের আদল নিয়ে, এখানে তা এসেছে মানব ভয়, আবেগের চেহারায়। ভেতরের জিনিস একই।
আমাদের বলা হয় সত্তার বাসনা হচ্ছে সবচাইতে পুরনো ভালোবাসা। নিশ্চিত করে বলতে গেলে, সবচাইতে অমূর্ত আর তাই সবচাইতে পুরনো ভালোবাসা হচ্ছে নিজের জন্য, কারুর নির্দিষ্ট সত্তার জন্য ভালোবাসা। কিন্তু সত্যটা এভাবে বললে বেশি চাঁচাছোলা হয়ে যায় বলে এর গায়ে আবেগের সদৃশ মহৎ বিভাঞ্চর চমক জড়ানো হয়।
এভাবে, কেউ তার স্ত্রী, সন্তান হারালেও একেবারে হারাবে না; তাদের শত বাজে অবস্থাতে হলেও অন্য কোথাও পাবে। ব্যাপারটা যদি ভালোবাসা হতো, তাহলে ঐ ব্যক্তির স্ত্রী, সন্তান সবচাইতে শুদ্ধতায় তার হৃদয়ে রক্ষিত থাকতো; যে সত্তার স্তর অভিঞ্চতাগত অস্তিত্বের চাইতে অনেক উঁচু। কিন্তু আসল ব্যাপারটা ভিন্ন। ঐ রকম স্ত্রী, সন্তান কেবলমাত্র অভিঞ্চতাগত অস্তিত্বে আছে, যতদূর পর্যন্ত তাদের আত্মীয় ঐ ব্যক্তিটি নিজেও অভিঞ্চতাগত অস্তিত্বে বিদ্যমান। ফলে কোন ব্যক্তি যখন এ কথা জানতে পছন্দ করে যে, শত বাজে অবস্থাতে হলেও মৃত আত্মীয়রা একেবারে না থাকার চাইতে বরং কোন সংবেদনগত স্থানে আছে তখন আসলে ঐ ব্যক্তি নিজেরই অভিঞ্চতাগত অস্তিত্বের চেতনা বজায় রাখতে চায়। ভালোবাসার আবরণটা আসলে একটা ছায়া। নগ্ন অভিঞ্চতাগত অহম্‌, নিজের প্রতি ভালোবাসা, সবচাইতে পুরনো ভালোবাসাটি হলো এর কেন্দ্রের শাঁস; আরো নিরেট, আরো ভাবের চেহারা নিয়েও সে নিজেকে ছোবড়া বানাতে পারে নি।
প্লুটার্ক বিশ্বাস করেন, জ্ঞএকেবারেই নেইঞ্চ এর চাইতে জ্ঞপরিবর্তনঞ্চ শব্দটি ভালো শোনায়। কিন্তু পরিবর্তনকে গুণগত কিছু বলে ধরে নেয়া হয় না। আর তাই শব্দটি তার আসল অর্থের সংবেদনগত ছায়া; আর তাকে তার উল্টোটাও হতে হয়। জিনিসগুলো আর বদলায় না, বরং অন্ধকারে লুকিয়ে রাখা হয়। গুণগত লাফ (আর প্রতিটি গুণগত নির্দিষ্টতাই একটি লাফ) দেয়া ছাড়া তাহলে কোন ভাবালুতাই হতবুদ্ধিকর দূরত্বে আবছা করা যাবে না।
প্লুটার্ক আরো মনে করেন যে, এই চৈতন্য *.............

পরবর্তী অংশ