Marxists Internet Archive
Bangla Section


জার্মান ভাবাদর্শ

কার্ল মার্কস


সূচীপত্র

মার্ক্সের সূত্রপাত

এখন পর্যন্ত মানুষ নিজেদের জন্য, নিজেদের নিয়েই ক্রমাগত ভ্রান্ত ধারণা তৈরী করেছে। তারা কি, আর তাদের কি হওয়া উচিত- এসব হচ্ছে ধারণাগুলোর বিষয়। তারা ধারণাগুলো সাজিয়েছে সৃষ্টিকর্তা ও সাধারণ মানুষ ইত্যাদি সম্পর্কে তাদের ধারণা অনুসারে। তাদের মগজের দৈত্যগুলো তাদের মনিব হয়ে বসেছে। তারা, মানে স্রষ্টারা তাদের সৃষ্টির সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে বসে আছে। ঐসব মামদো ভূত, ভাব, অন্ধমত, কাল্পনিক প্রাণীদের জোয়ালে মানুষ ঘানি টেনে নিঃশেষিত হচ্ছে। তাদের মুক্ত করা যাক। চিন্তার এই সূত্রগুলোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা হোক। একজন(১) বললো, মানুষকে শেখানো যাক এই কল্পনাগুলোকে মানুষের সাথে যুক্ত চিন্তা-ভাবনা দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে। দ্বিতীয় জন(২) চাইলো একটা সমালোচনামূলক অবস্থান গ্রহণ করতে। তৃতীয় জন(৩) বললো, ঐসব কল্পনাগুলো মাথা থেকে ঠেলে বের করে দাও- তাহলে বাস্তবতাই মাথায় ভেঙে পড়বে।
এই নিষ্পাপ আর শিশুসুলভ কল্পনাগুলোই নব্য হেগেলপন্থী দর্শনের মূল শাঁস। জার্মান জনগণই শুধু তা আতঙ্ক আর শ্রদ্ধামিশ্রিত ভয় নিয়ে গ্রহণ করেনি, আমাদের দার্শনিক বীরগণও সৌম্য চৈতন্যে দর্শনগুলোর প্রলয়ঙ্কর ভয়ংকরত্ব আর অপরাধীসূলভ নির্দয়তার কথা ঘোষণা করেছেন। যে ভেড়াগুলো নিজেদের নেকড়ে ভাবছে আর অন্যরাও যা মেনে নিয়েছে তাদের গায়ের নকল চামড়াটা উল্টে দেখানো এই বইয়ের প্রথম খন্ডের উদ্দেশ্য। আরো উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা দেখানো যে, ঐ ভেড়াগুলোর ডাক আসলে জার্মান মধ্যবিত্তের ধারণার দার্শনিক আঙ্গিকের অনুসরণ মাত্র। এই সব দার্শনিক টীকাকারের বুক ফোলানো অহংকার যে আসলে জার্মানীর আসল অবস্থার দূর্দশার প্রতিবিম্বমাত্র, তাও দেখানো হবে।
বইটির লক্ষ্য হচ্ছে বাস্তবতার ছায়ার সাথে কুস্তি খেলাকে নাকচ করা। ঐ কুস্তি প্রতিযোগিতা স্বাপ্নিক আর হতবুদ্ধি জার্মান জাতি বেশ উপভোগ করে।
কোন এককালে একজন ভালো মানুষের মনে হলো মানুষ জলে ডোবে, কারণ তাদের মাথা অভিকর্ষের তত্ত্বের বোঝায় ভারী হয়ে আছে। যদি ঐ ধারণাটি- ধরা যাক কুসংস্কার বা ধর্মীয় ধারণা বলে তাদের মাথা থেকে বের করে দেয়া যায় তাহলে তারা চিরকালের জন্য জলের সব বিপদ থেকে সুরক্ষিত হয়ে যাবে। সারাটা জীবন সে অভিকর্ষের মায়ার বিরুদ্ধে লড়লো, সমস্ত তথ্য পরিসংখ্যান থেকে অভিকর্ষের ভয়াবহতা সম্পর্কে নতুন নতুন বহুমুখী সব প্রমাণ হাজির করলো। জার্মানীর নতুন বিপ্লবী দার্শনিকেরা ঐ ভালো মানুষটার মতো।

পরবর্তী অংশ