Marxists Internet Archive
Bangla Section


ডেমোক্রেটিয় ও এপিকিউরিয় প্রকৃতির দর্শনের পার্থক্য

কার্ল মার্কস


সূচীপত্র

দ্বিতীয় অংশ: বিস্তারিতভাবে ডেমোক্রিটিয় ও এপিকিউরিয় পদার্থবিদ্যার পার্থক্য

পঞ্চম অধ্যায়: মেটিওর*
ডেমোক্রিটাসের জ্যোর্তিবিদ্যা সম্পর্কিত মতসমূহ প্রতিভাদীপ্ত হতে পারে তাঁর সময়ের জন্য, কিন্তু সেখানে দর্শন শাস্ত্রগত কৌতুহলোদ্দীপক কিছু নেই। তারা অভিঞ্চতাবাদী প্রতিফলনের পরিধিকে অতিক্রমও করে না, বা তাদের কোন নির্দিষ্ট সহজাত সংযোগও নেই পারমাণু মতবাদের সাথে।
বিপরীতে, এপিকিউরাসের গ্রহ-নক্ষত্রাদির তত্ত্ব এবং তাদের সাথে সংযুক্ত প্রক্রিয়াসমূহ অথবা তাঁর মেটিওরসমূহের তত্ত্ব (এই একটি শব্দে তিনি আগের সমগ্র বিষয়কে অন্তর্ভূক্ত করেছেন) শুধুমাত্র ডেমোক্রিটাসেরই নয়, বরং সামগ্রিকভাবে গ্রীক দর্শনের মতামতগুলোর বিপরীতে দাঁড়ায়। গ্রহ-নক্ষত্রাদির অর্চনার তন্ত্র সকল গ্রীক দার্শনিকই চর্চা করেছিলেন। গ্রহ-নক্ষত্রাদির পদ্ধতি হচ্ছে প্রথম সংকীর্ন এবং প্রকৃতি নির্ধারিত সত্য বুদ্ধির অস্তিত্ব। গ্রীক আত্ম-চৈতন্য জ্ঞমনেরঞ্চ পরিধিতে একই স্থান নিয়েছিল। এ হচ্ছে মনের জ্ঞসৌর-পদ্ধতিঞ্চ। গ্রীক দার্শনিকরা তাই গ্রহ-নক্ষত্রাদির আদলে নিজেদেরই মনের অর্চনা করতেন।
এনাক্সেগোরাসই প্রথম অন্তরীক্ষের একটি পদার্থ ভিত্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন; এবং এই পদ্ধতিতে সক্রেটিস থেকে ভিন্ন একটি বোধ বা অনুভূতির মধ্যে অন্তরীক্ষকে পৃথিবীতে নামিয়ে এনেছিলেন। যখন তাঁকে জিঞ্চেস করা হয়েছিল যে, কি উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি জন্মেছিলেন; তিনি উত্তর দেন: সূর্য, চন্দ্র এবং অন্তরীক্ষ পর্যবেক্ষণের জন্য। যা হোক, জেনোফেনেস অন্তরীক্ষের দিকে তাকান এবং বলেন: এক-ই হচ্ছে ঈশ্বর। গ্রহ-নক্ষত্রাদির প্রতি পিথাগোরিয়দের, প্লেটো এবং এরিস্টটলের ধার্মিকতাপূর্ণ আচরণ আমাদের ভালোভাবেই জানা আছে।
প্রকৃতপক্ষে, এপিকিউরাস সমগ্র গ্রীক লোকায়ত দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করেন।
এরিস্টটল বলেন, এটা প্রায়শঃই মনে হয় যে, ধারণা প্রপঞ্চের জন্য প্রমাণ সরবরাহ করে; আর প্রপঞ্চ করে ধারণার জন্য। এভাবে, সকল মানুষের কাছে দেবতাদের একটা ধারণা আছে এবং তারা ঈশ্বর বা দেবতাদের জন্য সর্বোচ্চ স্থান চিহ্নিত করে- সে বর্বরই হোক, আর গ্রীকই হোক। সাধারণভাবে যারা দেবতাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে, তারা সকলেই প্রমাণিতভাবে অমরের সাথে অমরকে সংযুক্ত করে। অন্য অবস্থার জন্য এটা অসম্ভব। এভাবে যদি জ্ঞদিব্যঞ্চ অস্তিত্বশীল থাকে, বাস্তবিক যেমন আছে, তাহলে আমরা গ্রহ-নক্ষত্রাদির ব্যাপারে যা কিছু বলবো, তাও সঠিক। কিন্তু এটা সংবেদনগত প্রত্যক্ষণের জন্য প্রযোজ্য, যতদূর পর্যন্ত তা মানুষের ধারণা সংশ্লিষ্ট। যে সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে তার মধ্যে, উত্তরাধিকার সূত্রে মানুষের বয়ে চলা স্মৃতিগুলো অনুসারে, সমগ্র অন্তরীক্ষের মধ্যে অথবা এর যে কোন অংশে কোন কিছুই পরিবর্তিত হয়েছে বলে মনে হয় না। এমনকি এটা মনে হয় যে, নামগুলোও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাচীন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চলে এসেছে। আমরা যা বলি; তারাও তা-ই ধারণ করে। একবার বা দুঞ্চবারের নয়; বরং অসীম সংখ্যক সময়ে একই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল বা আছে, যা আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। পৃথিবী, আগুন, বায়ু এবং পানির তুলনায় প্রাথমিক পদার্থটি কিছুটা ভিন্ন থাকার কারণে তারা সর্বোচ্চ এলাকাকে ডাকতো জ্ঞইথারঞ্চ- সর্বদাই ছুটে চলা বলে। তারা এর ডাক নাম দিয়েছিল: চিরন্তন কাল। কিন্তু প্রাচীনরা স্বর্গ এবং সর্বোচ্চ স্থানটিকে দেবতাদের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেন। কারণ একমাত্র এটাই অবিনশ্বর। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা পরখ করে যে, এটা অবিনাশ্য, অনুৎপাদিত এবং অমরণশীল কিছু একে ছুতে পারে না। এই পদ্ধতিতে আমাদের ধারণাগুলো একই সময়ের ঈশ্বর সম্পর্কে ইঙ্গিতের সাথে সুসঙ্গত হয়। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, একটা অন্তরীক্ষ রয়েছে। এটি একটি ঐতিহ্য, যা আমাদের পূর্ব-পুরুষদের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রবাহিত হয়েছে তা পরবর্তী প্রজন্মগুলোর পুরাণের এই রূপে টিকে আছে যে, গ্রহ-নক্ষত্রাদি হচ্ছে দেবতারা, এবং এই জ্ঞদিব্যঞ্চ প্রকৃতিকে বেষ্টিত করে রাখে। বাকিটা জনতার বিশ্বাসে আইন এবং জীবনের জন্য জরুরী বলে পৌরাণিক আঙ্গিকে যুক্ত হয়। এভাবে পুরাণগুলো দেবতাদের মধ্যে মানুষ ও অন্যান্য জীবন্ত সৃষ্টিকে সদৃশভাবে উপস্থাপন করে এবং এর সাথে যুক্ত ও সম্পর্কিত অন্যান্য জিনিস আবিষ্কার করে। আমরা যদি এই যুক্ততাকে না-মঞ্জুর করি এবং দ্রুত শুধু প্রথমটিকেই আঁকড়ে ধরি, (যেমন এই বিশ্বাস যে, প্রাথমিক সারসত্তাগুলো হচ্ছে দেবতা); তাহলে আমরা অবশ্যই এটাকে দিব্যভাবে প্রকাশিত হিসেবে বিবেচনা করবো। সাথে আমরা অবশ্যই এটাও ধরব যে, সকল কলা ও দর্শন একরকমভাবে, এক অথবা অন্য রকম পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত হয়েছিল এবং আবার হারিয়ে গেছে। ঐ মতবাদগুলোই আমাদের কাছে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে নেমে আসে।এর বিপরীতে এপিকিউরাস বলেন:
জ্ঞএই সব কিছুুতে আমাদের অবশ্যই এটাও যোগ করতে হবে যে, মানবাত্মার সবচেয়ে বড় বিভ্রান্তি যা থেকে উত্থিত হয়, তা হচ্ছে মানুষ (পুরাণ অনুসারে) বিশ্বাস করে গ্রহ-নক্ষত্রাদি আশীর্বাদপ্রাপ্ত এবং অবিনশ্বর; তাদের দ্বন্দ্বরত ইচ্ছা এবং ক্রিয়া আছে; তারা সন্দেহ অনুভব করে। মেটিওর-এর ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি যে, গতি এবং অবস্থান, চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণ এবং উদিত হওয়া ও অস্ত যাওয়া এবং সম্পর্কিত প্রপঞ্চ কোন জ্ঞএকেঞ্চর নিয়ন্ত্রণ এবং নির্দেশকের কাছে দায় রেখে নিজেদের মাঝে সূত্রপাত ঘটায় না। সেই জ্ঞএকঞ্চ একই সময়ে সকল আশীর্বাদ এবং অমরতা ধারণ করে বলে মনে করা হয়। কারণ ক্রিয়া আশীর্বাদ থেকে নয়, বরং তা ঘটে কারণ হতে, যা দূর্বলতা, ভয় ও চাহিদার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্কিত। এটাও মনে করা যায় না যে, কোন আশীর্বাদধন্য অগ্নিসদৃশ দেহ স্বেচ্ছায় এই গতিসমূহে অর্পিত হয়। যদি কেউ এই ধারণাতে একমত না হয়, তাহলে এই দ্বন্দ্ব নিজেই মানুষের আত্মার মধ্যে সবচাইতে বড় বিভ্রান্তি তৈরী করে।ঞ্চ
এরিস্টটল প্রাচীনদের এই বিশ্বাসের তিরস্কার করেন যে, স্বর্গের এটলাসের সাহায্যের দরকার হয়েছিল- যে এটলাস জ্ঞপশ্চিমে স্বর্গ আর মর্ত্যের স্তম্ভগুলোকে কাঁধ দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন।ঞ্চ (এসকাইলাস, প্রমিথিউস)। অন্যদিকে এপিকিউরাস তাদেরকে নিন্দা জানান, যারা বিশ্বাস করে যে, মানুষের স্বর্গ প্রয়োজন। তিনি খুঁজে পান সেই এটলাস, যাকে দিয়ে স্বর্গকে মানুষের মাঝে নির্বুদ্ধিতা আর কুসংস্কারের খুঁটিগুলো দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। স্থুলবুদ্ধিত্ব এবং কুসংস্কারাচ্ছন্নতা হল তার টাইটান।
পিথাক্লেসের প্রতি লেখা এপিকিউরাসের চিঠি পুরোটাই শেষ অংশের ব্যতিক্রমসহ গ্রহ-নক্ষত্রাদির তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা। নীতিগত অনুঞ্চাসহ চিঠিটির সমাপ্তি হয়। আর যথাযথভাবেই মেটিওরতত্ত্ব শিক্ষার সাথে নৈতিক উদাহরণ যুক্ত হয়েছে। এপিকিউরাসের জন্য এই তত্ত্ব হচ্ছে একটি নীতিবোধের বিষয়। তাই আমাদের অধ্যয়নের মূল ভিত্তি থাকবে পিথাক্লেসের কাছে লেখা এ চিঠিটি। হেরোডোটাসের কাছে লেখা চিঠি থেকে আমরা পরিশিষ্ট নেব; এপিকিউরাস নিজেও পিথাক্লেসকে লিখতে গিয়ে এখান থেকে উদ্ধৃতি দেন।
প্রথমত: এটা অবশ্যই মনে করা যাবে না যে, প্রশান্তি এবং দৃঢ় নিশ্চয়তা ছাড়া মেটিওরসমূহের ঞ্চান থেকে অন্য কোন লক্ষ্যের নাগাল পাওয়া যেতে পারে; তা সে ঞ্চান একদম অন্যান্য প্রাকৃতিক বিঞ্চানের মতোই সমগ্র অথবা আংশিকই নেয়া হোক না কেন। আমাদের জীবনে কল্পনা এবং ফাঁকা প্রকল্পের প্রয়োজন নেই; বরং বিভ্রান্তি ছাড়াই আমাদের বেঁচে থাকা উচিত। যেমন করে, সাধারণভাবে প্রকৃতি সমীক্ষার কাজ হচ্ছে- যা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ তার ভিত্তি অনুসন্ধান করা, ঠিক তেমনি, সুখ নিহিত আছে মেটিওর সংক্রান্ত ঞ্চানের মাঝে। অস্তমিত এবং উদিত হওয়ার তত্ত্ব, অবস্থান এবং চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণের তত্ত্ব নিজের মধ্যে এবং নিজের জন্য সুখের কোন স্বতন্ত্র ক্ষেত্রে ধারণ করে না। যারা এই জিনিসগুলোর প্রকৃতি এবং প্রধান কারণসমূহ বোঝা ব্যতিরেকে তাদেরকে দেখে, তাদের উপর ত্রাস ভর করে। মেটিওরতত্ত্বের যে পূর্বজতা বিঞ্চানের অন্যান্য তত্ত্বের উপর আছে বলে মনে করা হয়, তাকে এখন পর্যন্ত অস্বীকার এই তত্ত্বকে অন্যান্যদের সাথে একই সারিতে স্থাপন করে।
কিন্তু নীতিবিদ্যার পদ্ধতি এবং অন্যান্য পদার্থগত সমস্যাবলী উভয়ের তুলনায় মেটিওরসমূহের তত্ত্বও নির্দিষ্টভাবে ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ, অদৃশ্য উপাদানসমূহ এবং এই রকম গুলোর অস্তিত্ব, যেখানে শুধুমাত্র একটি ব্যাখ্যা প্রপঞ্চটির (প্রতি) সুসঙ্গত হয়। যে কারণে মেটিওরসমূহের সাথে ব্যাপারটা এমন নয়। তাদের উৎপত্তির সরল কোন কারণ নেই এবং তাদের প্রপঞ্চের সাথে সম্পর্কিত একাধিক ক্যাটেগরির সারসত্তা আছে। এজন্য প্রকৃতির অধ্যয়ন ফাঁকা স্বতঃসিদ্ধ এবং আইন দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করা যাবে না। এটা বারবার বলা হয়েছে যে, মেটিওরগুলোর সরলভাবে বা পরমভাবে ব্যাখ্যা দেয়া যায় না, দিতে হয় একাধিকতায়।
সূর্য-চন্দ্রের উদয় এবং অস্ত, চন্দ্রের বৃদ্ধি-ক্ষয়, চেহারা সদৃশ চন্দ্রের পৃষ্ঠদেশ, দিন এবং রাতের পরিবর্তনের স্থিতিকাল এবং অন্যান্য দিব্য বা অন্তরীক্ষের প্রপঞ্চের জন্যও তা প্রযোজ্য।
তাহলে কিভাবে এর ব্যাখ্যা করা হবে?
প্রতিটি ব্যাখ্যা পর্যাপ্ত। তবে পুরাণকে অবশ্যই অপসারণ করতে হবে। যখন আমরা প্রপঞ্চটিকে পর্যবেক্ষণ করবো এবং জ্ঞঅদৃশ্যঞ্চকে বিবেচনায় রেখে সমাপ্তি রেখা টানবো, এটা অপসারিত হবে। আমাদের অবশ্যই আগে প্রতিভাস এবং সংবেদনকে ধরতে হবে। তাই উপমা অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে। এই পদ্ধতিতে আমরা ভয়ের ব্যাখ্যা দিয়ে যেতে পারবো এবং নিজেদেরকে এর থেকে মুক্ত করতে পারবো; মেটিওরসমূহ এবং অন্যান্য কারণ, যা সর্বদাই ঘটছে, অন্যান্য লোকদের ত্রস্ততার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বহু ব্যাখ্যা, সম্ভাবনাগুলো দিয়ে শুধুমাত্র আমাদের মনকে শান্ত বা ভয়ের কারণগুলোকে অপসারিত করলেই চলবে না; বরং একই সময়ে গ্রহ-নক্ষত্রাদির মধ্যের তাদের ঐক্যবদ্ধতা, পরম আইনকেও (যা সবসময় এর নিজের সমপর্যায়ের) অস্বীকার করতে হবে। এই গ্রহ-নক্ষত্রাদি কখনও একভাবে, কখনও বা অন্যভাবে আচরণ করতে পারে; এই সম্ভাবনা কোন আইনে খাপ খায় না; এটাই তাদের বাস্তবতার বৈশিষ্ট্য। তাদের মধ্যকার সবকিছু ঘোষিত হয়েছে অস্থায়ী এবং অপ্রতিষ্ঠিত বলে। ব্যাখ্যাসমূহের বহুত্বের উচিত একই সময়ে বস্তুর ঐক্যকে অপসারিত করা। এভাবে যখন অন্যান্য গ্রীক দার্শনিকদের সাথে ঐক্যমতে এরিস্টটল গ্রহ-নক্ষত্রাদিকে শাশ্বত এবং অমর হিসেবে বিবেচনা করেন, কারণ তারা সবসময় একই ধরণের আচরণ করে, এমন কি যখন তিনি তাদের নিজেদের একটি উপাদান আরোপ করেন, যা উচ্চতর এবং আকর্ষণ শক্তির অধীন নয়; তখন এপিকিউরাস সরাসরি এর বিপরীতটি দাবি করেন। তিনি যুক্তি দেখান, মেটিওরতত্ত্বটি অন্য সব পদার্থের তত্ত্বগুলো থেকে এই দিক থেকে ভিন্ন যে, মেটিওরগুলোর মধ্যে সবকিছুই বহুবিধ ও অনিয়মিত উপায়ে ঘটে। এর সবকিছুই অনির্দিষ্ট অনেক কারণের বহুবিধতা দ্বারা ব্যাখ্যা করতে হবে। হ্যাঁ, ক্রোধ এবং উত্তেজনার প্রচন্ডতায় তিনি বিপরীত মতামতগুলোকে বাতিল করে দেন এবং ঘোষণা করেন যে, যারা অন্য সব বাদ দিয়ে কেবলমাত্র একটি ব্যাখ্যা পদ্ধতিতে লেগে থাকবেন, যারা অনন্য কিছু একটা স্বীকার করেন, যারা বলবেন মেটিওরসমূহে চিরন্তন, দৈবিক ভাবে আছে, তারা অলস ব্যাখ্যা তৈরী এবং জ্যোতির্বিদদের দাসসুলভ পুরাণের কোলে গা এলিয়ে দেন, অসম্ভবকে পেতে চান। অসম্ভবকে নিয়ে ব্যস্ত থেকে তারা এটাও ভাবেন না যে, পার্থিব বিষয়ে এই ঔদাসীন্য কোন্‌ সীমা পার হলে নিজেই বিপদে পড়ে। তাদের কলরবকে হেয় করতে হবে। এই বিষয়গুলোতে অনুসন্ধান পর্যাপ্তভাবে ধারাবাহিক এবং সূক্ষ্ম নাও হতে পারে, যদি এর লক্ষ্য থাকে শুধু আমাদের নিজেদের পার্থিব বিষয়ে প্রশান্তি এবং আশীর্বাদ, তবে এই আপ্ত ধারণা ত্যাগ করতে হবে। অপর দিকে, এটা একটা পরম আইন যে, যা কিছু পার্থিব প্রশান্তি বিঘ্ন ঘটায় না, বিপদ ঘটায় না, তা অনন্ত প্রকৃতির অন্তর্গত হতে পারে। চৈতন্যকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে,এটি একটি পরম আইন। এ থেকে এপিকিউরাস সিদ্ধান্ত নেন: যেহেতু গ্রহ-নক্ষত্রাদির পরমত্ব আত্ম-চৈতন্যের প্রশান্তি বিঘ্ন ঘটাবে, সুতরাং এটি একটি প্রামাণিক এবং কঠোর পরিণাম যে, তারা পরম নয়।
কিন্তু আমরা কিভাবে এপিকিউরাসের এই অদ্ভুত দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারবো?
এপিকিউরিয় দর্শনের উপর যারা লিখেছেন, তাঁরা সকলেই এই শিক্ষাকে পদার্থবিদ্যার অবশিষ্ট সবকিছুর সাথে, পারমাণু মতবাদের সাথে সামঞ্জস্যহীন বলে উপস্থাপন করেছেন। বৈরাগ্যবাদীদের বিরুদ্ধে, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, ফলিত জ্যোতিষবিদ্যার বিরুদ্ধে এ লড়াইটিকে পর্যাপ্ত ভিত্তি হিসেবে নেয়া হয়।
আর আমরা দেখেছি যে, এপিকিউরাস নিজে পদার্থবিদ্যার অবশিষ্ট পদ্ধতিসমূহ থেকে মেটিওর তত্ত্বে প্রয়োগকৃত পদ্ধতিকে পৃথক করেন। কিন্তু তাঁর নীতির কোন সংঞ্চায় এই স্বতন্ত্রতার প্রামানিকতা খুঁজে পাওয়া যেতে পারে? কিভাবে এই ভাবটি তাঁর কাছে প্রতীয়মান হয়?
তিনি শুধুমাত্র ফলিত জ্যোতিষবিদ্যার বিরুদ্ধেই নয়, বরং স্বয়ং জ্যোতির্বিদ্যা এবং গ্রহ-নক্ষত্রের পদ্ধতির মধ্যে শাশ্বত আইন এবং যুক্তির প্রয়োগের বিরুদ্ধেও লড়েন। শেষ পর্যন্ত, বৈরাগ্যবাদের বিরোধিতা কোন ব্যাখ্যাই বয়ে আনে না। তাদের কুসংস্কার এবং তাদের সমগ্র দৃষ্টিকোণ ইতিমধ্যে যুক্তি দ্বারা খন্ডিত হয়ে গিয়েছে, যখন গ্রহ-নক্ষত্রাদিকে পরমাণুর আকস্মিক যৌগ এবং তাদের অধিকারভূক্ত পরমাণুর আকস্মিক গতি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। তার ফলে, তাদের শাশ্বত প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে যায়; এটি এমন একটি ফলাফল, যা ঐ ক্ষেত্র হতে টানতে পেরে ডেমোক্রিটাস সন্তুষ্ট ছিলেন। বাস্তবিকই, ঠিক তাদের সত্তাই মীমাংসিত হয়েছিল। পরমাণুবাদীদের তাই নতুন কোন পদ্ধতির প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু এখানেই ঝামেলার শেষ হলো না। বরং আরও হতবুদ্ধিকর বিরোধাভাস হাজির হলো।
পরমাণু হচ্ছে মুক্ততা এবং স্বতন্ত্রতার আঙ্গিকে বস্তু; যেন তা ওজনের প্রতিনিধিত্বকারী। কিন্তু গ্রহ-নক্ষত্রাদি হচ্ছে ওজনের সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন। তাদের মধ্যে আঙ্গিক এবং বস্তুর, ধারণা এবং অস্তিত্বের সকল শাস্ত্রীয় বিরোধাভাস (যা পরমাণুর বিকাশ গঠন করে) বিদূরিত হয়। তাদের মধ্যে সকল প্রয়োজনীয় নির্ধারণই বাস্তবায়িত। গ্রহ-নক্ষত্রগুলো চিরন্তন এবং অপরিবর্তনীয়; তাদের আকর্ষণের কেন্দ্র তাদের নিজেদের মধ্যে, বাইরে নয়। তাদের একমাত্র ক্রিয়া হচ্ছে গতি। ফাঁকা স্থান দ্বারা আলাদা হয়ে তারা সরলরেখা থেকে এবং আকর্ষণ-বিকর্ষণের পদ্ধতি থেকে বিচ্যুত হয়। তারা তখন একই সময়ে তাদের মুক্ততাও বজায় রাখে এবং শেষতঃ তাদের প্রতিভাসের আঙ্গিক হিসেবে কাল কে প্রবাহিত করে। তাই, গ্রহ-নক্ষত্রাদি হচ্ছে পরমাণু, যা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তাদের মধ্যে বস্তু নিজেরাই নিজের স্বতন্ত্রতা গ্রহণ করে। তাই এখানে অবশ্যই এপিকিউরাস তাঁর নীতির এবং পদ্ধতির চূড়া ও চূড়ান্ত বিন্দুর সর্বোচ্চ অস্তিত্বে উঁকি মেরেছেন। তিনি বলেন যে, তাঁর পরমাণু এমন করেই মননকৃত, যাতে প্রকৃতি একটি অমর ভিত্তি পায়। তিনি আরো বলেন যে, তিনি বস্তুর উপাদানগত স্বতন্ত্রতা সম্বন্ধে জানতেন। কিন্তু যখন তিনি তাঁর প্রকৃতির বাস্তবতাতে পৌঁছান (তিনি জ্ঞযান্ত্রিকঞ্চ ভিন্ন অন্য কোন প্রকৃতি সম্পর্কে জানতেন না), যখন তিনি গ্রহ-নক্ষত্রাদির মধ্যকার স্বাধীন, অমর পদার্থগুলোতে পৌঁছান (যে পদার্থগুলোর অমরত্ব এবং অপরিবর্তনীয়তা লোকদের বিশ্বাস, দর্শনের বিচার, অনুভূতি দ্বারা প্রমাণিত হয়েছিল), তখন তাঁর এক এবং একমাত্র সাধ হচ্ছে এটাকে পৃথিবীর অস্থায়ীতে টেনে নামানো। তিনি তাঁদের বিরুদ্ধে প্রচন্ডভাবে ঘুরে দাঁড়ান, যারা একটি স্বাধীন প্রকৃতির অর্চনা করে, যে প্রকৃতি নিজের মধ্যে স্বতন্ত্রতার গুণ ধারণ করে। এটাই তাঁর সবচেয়ে চোখ ধাঁধানো অন্তঃবিরোধ।
অতঃপর, এপিকিউরাস এটা অনুভব করেন যে, এখানে তাঁর ক্যাটেগরিগুলো ভেঙে পড়ে। অর্থাৎ তাঁর তত্ত্বের পদ্ধতি ভিন্ন হয়ে যায়। যে গভীরতম ঞ্চান অর্জিত হয় তাঁর পদ্ধতির দ্বারা, যা এর সবচেয়ে ধারাবাহিক সুসঙ্গতি, তা হচ্ছে যে, তিনি এ ব্যাপারে সতর্ক এবং সচেতনভাবেই এটাকে প্রকাশ করেন।
বস্তুত: আমরা দেখেছি কিভাবে সমগ্র এপিকিউরিয় প্রাকৃতিক দর্শন সারসত্তার এবং অস্তিত্ব, আঙ্গিক এবং বস্তুর মধ্যকার দ্বন্দ্বের দখলে চলে যায়। কিন্তু এই দ্বন্দ্ব গ্রহ-নক্ষত্রগুলোর মধ্যে সমাধা হয়; সংঘর্ষপূর্ণ মুহূর্তগুলো পুনর্মিলিত হয়। অন্তরীক্ষগত পদ্ধতিতে বস্তু নিজের মধ্যেই আঙ্গিক গ্রহণ করে, নিজের মধ্যেই স্বতন্ত্রতা গ্রহণ করে, এবং এভাবে এর স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু এই বিন্দুতে এটা অমূর্ত আত্ম-চৈতন্যকে স্বীকৃতি দেয়া থেকে রদ হয়ে যায়। প্রতিভাসের জগতের মতো পরমাণুর জগতের মধ্যে আঙ্গিক বস্তুর বিরুদ্ধে লড়াই করে, একটি নির্ধারণ অন্যটি অতিক্রম করে। এবং মোদ্দা কথায় এই দ্বন্দ্বের মধ্যে অমূর্ত-স্বতন্ত্র আত্ম-চৈতন্য এর প্রকৃতিকে বিষয়কৃত ভাবে টের পায়। এই অমূর্ত আঙ্গিক, যা বস্তুর আকারে অমূর্ত বস্তুর বিরুদ্ধে লড়ে, নিজেই এই আত্ম-চৈতন্য। কিন্তু এখন যখন বস্তু নিজেই আঙ্গিকের সাথে পুনর্মিলিত হয় এবং পাওনা হিসেবে ধারণ করে আত্ম-পর্যাপ্ততা, স্বতন্ত্র আত্ম-চৈতন্য এর জ্ঞশুককীটঞ্চ থেকে উড়াল দেয় আর নিজেকে জ্ঞসত্যিকারের নীতিঞ্চ হিসেবে প্রকাশ্যে ঘোষণা করে; এবং যে প্রকৃতি স্বাধীন হয়ে গেছে তার বিরোধিতা করে।
আরেকটি দৃষ্টিকোণ থেকে এই সবকিছুকে এভাবে দেখা যেতে পারে: বস্তু তার নিজের মধ্যে স্বতন্ত্রতা গ্রহণ করে আঙ্গিক (গ্রহ-নক্ষত্রাদির যেমন), অমূর্ত-স্বতন্ত্রতা হওয়া থেকে বিরত থাকে; এটা নিরেট স্বতন্ত্রতা, বিশ্বজনীনতায় পরিণত হয়। মেটিওরসমূহে তাই অমূর্ত-স্বতন্ত্র আত্ম-চৈতন্য এর দ্বন্দ্বের দ্বারা সমাধিত হয়, জ্বলজ্বল করে বস্তুগত আঙ্গিকে, মানে মহাবিশ্ব, যা অস্তিত্ব এবং প্রকৃতিতে পরিণত হয়েছে। অতঃপর মেটিওরসমূহে এটা এর চরম শত্রুকে চিনতে পারে এবং তাদের উপর আরোপ করে মানুষের সকল উদ্বেগ এবং বিভ্রান্তিকে (যেমনটি এপিকিউরাস করেন)। প্রকৃতপক্ষে, অমূর্ত-স্বতন্ত্রের উদ্বেগ এবং বিগঠন যথাযথভাবেই বিশ্বজনীন। এখানে তাই, এপিকিউরাসের সত্য-নীতি, অমূর্ত-স্বতন্ত্র আত্ম-চৈতন্য বিন্দুমাত্রও গোপন করতে পারা যায় না। এটা এর লুকানোর স্থান থেকে বেরিয়ে এসে এর বস্তুগত মুকাভিনয় থেকে মুক্তি পায়; ধ্বংস করতে চায় প্রকৃতির বাস্তবতাকে- যা স্বাধীন হয় অমূর্ত সম্ভাবনা ব্যাখ্যা দ্বারা: যা সম্ভব, তা এর বিপরীতও হতে পারে; যা সম্ভব তার বিপরীতও সম্ভব। আর তাই, তাদের বিরুদ্ধে তর্কযুদ্ধ চলে, যারা গ্রহ-নক্ষত্রাদিকে সরল বা পরম ভাবে, মানে নির্দিষ্ট একটি দিক থেকে ব্যাখ্যা করেন। কারণ তারা মনে করেন, জ্ঞএকঞ্চ হচ্ছে প্রামানিক এবং তা নিজের মাঝেই স্বাধীন।
এভাবে যতক্ষণ প্রকৃতি পরমাণু এবং প্রতিভাস হিসেবে স্বতন্ত্র-আত্ম-চৈতন্য এবং এর দ্বন্দ্বকে প্রকাশ করে, ততক্ষণ আত্ম-চৈতন্যঞ্চর বিষয়ীগততা প্রতিভাসিত হয় শুধুমাত্র বস্তুর নিজস্ব আঙ্গিকের মধ্যে। যেখানে অন্যদিক থেকে এটা স্বাধীন হয়ে যায় নিজেকে নিজের মধ্যেই প্রতিফলিত করে, বস্তুর মোকাবিলা করে নিজের আকারে, স্বাধীন আঙ্গিক হিসেবে।
প্রথম থেকে এটা বলা যেত যে, যেখানে এপিকিউরাসের নীতি বাস্তবতায় পরিণত হবে সেখানেই এটা তাঁর জন্য বাস্তবতা থেকে রদ হয়ে যাবে। যদি স্বতন্ত্র-আত্ম-চৈতন্যকে প্রকৃতির নির্ধারণের সাপেক্ষ বাস্তবতায় প্রদর্শন করা হয়, অথবা প্রকৃতি যদি প্রদর্শিত হয়, তাহলে স্বতন্ত্র-চৈতন্যতে নির্ধারণের অধীনে এর নির্ধারণ, মানে এর অস্তিত্ব রদ হয়ে যায়। কারণ নিজের থেকে মুক্ত নির্ধারিত সার্বজনীন একই কালে এর নিজস্ব স্বীকৃতি জানতে পারে।
মেটিওরসমূহের তত্ত্বের মধ্যে তাই প্রকৃতির এপিকিউরিয় দর্শনের আত্মা আবির্ভূত হয়। কোন স্বতন্ত্র আত্ম-চৈতন্যর পার্থিব বিষয়ে প্রশান্তিকে যা কিছু ধ্বংস করে, তেমন কিছুই চিরন্তন নয়। গ্রহ-নক্ষত্রাদি এর প্রশান্তিতে, এর মনের ধীরতায় নিজেই ব্যাঘাত করে, কারণ তারাই অস্তিত্বশীল বিশ্বজনীনতা- যেহেতু প্রকৃতি তাদের মধ্যেই স্বাধীন হয়েছে।
এভাবে এপিকিউরিয় দর্শনের নীতি, ক্রিসিপ্পাস যেমনটি বিশ্বাস করেন, আর্কেসট্রটাসের পাচনবিদ্যা নয়, বরং আত্ম-চৈতন্যঞ্চর পরমত্ব এবং মুক্ততা; এমনকি আত্ম-চৈতন্য যদি শুধুমাত্র স্বতন্ত্রতার আঙ্গিকে ভাবা হয় তাহলেও।
যদি অমূর্ত-স্বতন্ত্র আত্ম-চৈতন্যঞ্চকে পরম নীতি বলে প্রদর্শিত করা হয়, তাহলে আসলেও সত্য এবং বাস্তব বিঞ্চান পালিয়ে ফেরে যতটা স্বাতন্ত্রতা স্বয়ং সেই জিনিসের প্রকৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। কিন্তু তাহলেও সব কিছু ধ্বসে পড়ে, মানে তা ছাপিয়ে গিয়ে মানব চেতনার সাথে সম্পর্কিত হয়, আর তাই তা কল্পনাকারী মনের অন্তর্গত। অন্যদিকে যদি ঐ আত্ম-চৈতন্য, যা এর নিজেকে জানে শুধুমাত্র অমূর্ত-বিশ্বজনীনতার আঙ্গিকে, তা একটি পরম নীতিতে উন্নীত হয়- তাহলে কুসংস্কার এবং অতীন্দ্রিয়বাদের দিকে দরজা পুরোপুরি খুলে যাবে। বৈরাগ্যবাদী দর্শন এর ঐতিহাসিক প্রমাণ হাজির করে। বস্তুতঃ অমূর্ত-বিশ্বজনীন আত্ম-চৈতন্যঞ্চর নিজেকে তদ্‌সত্তার সাথে দৃঢ়ভাবে স্বীকৃত করার সহজাত প্রেরণা আছে, যেখানে তা শুধুমাত্র তাদেরকে অস্বীকার করে আত্ম-সমর্থন করতে পারে।
তাই এপিকিউরাসই জ্ঞগ্রীক পুনর্জাগরণেঞ্চর সবচেয়ে মহান প্রতিনিধি; এবং লুক্রেটিয়াসের প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য:
জ্ঞযখন যতদূর চোখ পড়ে- মানব জীবন ভূলুন্ঠিত ছিল, মৃত ধর্মের ভারে পিষ্ট ছিল, যে ধর্ম সাত আসমানের উপর থেকে মর্ত্য মানবদের লক্ষ্য করে বিভৎস চেহারা নিয়ে ভূতুড়ে হুংকার ছাড়ে; তখন গ্রীস দেশের একজন প্রথম মর্ত্য মানবদের চোখকে অবঞ্চা নিয়ে তাকাতে শেখান, তিনিই প্রথম বুক টান-টান করে হুমকির সামনে দাঁড়ান। আকাশের কোন ভীতিপ্রদ বজ্রঝলক, দেবতাদের উপকথা কিছুই ভীত করে নি তাঁকে..... আর তাই ধর্ম বরং পাল্টা তাঁর পায়ের তলে পিষ্ট হয় আর আমরা তাঁর বিজয়ে দাঁড়াই আকাশের সমান উঁচুতে।ঞ্চ
ডেমোক্রিটিয় এবং এপিকিউরিয় প্রাকৃতিক দর্শনের মধ্যে পার্থক্য আমরা সাধারণ অংশের শেষেই প্রতিষ্ঠিত করেছি। এই পার্থক্যকে প্রকৃতির সকল ক্ষেত্রেই পরিবর্ধিত এবং দৃঢ়ভাবে প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এপিকিউরাসে তাই সকল দ্বন্দ্বসহ পরমাণুবাদকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আত্ম-চৈতন্যঞ্চর প্রাকৃতিক বিঞ্চান হিসেবে। অমূর্ত স্বতন্ত্রতার আঙ্গিকে এই আত্ম-চৈতন্য হচ্ছে একটি পরম নীতি। এপিকিউরাস এভাবে পরমাণুবাদকে এর চূড়ান্ত উপসংহারে নিয়ে যান, যা এর বিগঠন এবং সার্বজনীনতার সচেতন প্রতিপক্ষ। অন্যদিকে, ডেমোক্রিটাসের কাছে পরমাণু হচ্ছে শুধুমাত্র সমগ্রভাবে প্রকৃতির অভিঞ্চতাবাদী অনুসন্ধানের সাধারণ বিষয়গত প্রকাশ। অতঃপর পরমাণু তাঁর কাছে একটি খাঁটি এবং অমূর্ত ক্যাটেগরি ও অভিঞ্চতার ফলাফল হিসেবে একটি প্রকল্প রূপে থাকে, এর সক্রিয় নীতি হিসেবে নয়। এই প্রকল্প তাই কোন বাস্তবায়ন ছাড়াই বহাল থাকে; আর প্রকৃতির বাস্তব অনুসন্ধানের নির্ধারণে কোন ভূমিকাই রাখে না।

পরবর্তী অংশ